গতকাল আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করেছিলাম গ্রেস কটেজের ইতিহাসের কথা। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি ওখানে আয়োজিত অনুষ্ঠানের কারণ।
ডিসেম্বর মাসের ৩ তারিখে স্বনামধন্য শিল্পী নন্দলাল বসু জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। নন্দলাল বসুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে গ্রেস কটেজে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সুজন বাসর এবং চারুকলা সোসাইটির উদ্যোগে এরকম মাঝেমধ্যেই বিশিষ্ট মানুষদের জন্মবার্ষিকী এবং মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়ে থাকে। সাথেই আয়োজন করা হয় নানান রকম অনুষ্ঠান, শহরের ছেলেমেয়েদের উৎসাহ জাগাতে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন রকমের প্রতিযোগিতা , সমাজ সেবামূলক কাজ, কবি সম্মেলন আয়োজিত হয়।
বেশ কিছুদিন আগে পোস্টে আমি উল্লেখ করেছিলাম সারা রাস্তা জুড়ে আলপনা দেওয়ার একটি মুহূর্ত। সেই সমস্ত আলপনার প্ল্যান ছিল চারুকলা সোসাইটির। এই সংস্থার সাথে বহু মানুষ যুক্ত। ছোট থেকে বড় সকলেই এই সংস্থার সাথে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে এখন ১৫০ জনেরও বেশি সদস্য চারুকলা সোসাইটিতে রয়েছে।
শহরকে অনুষ্ঠানের দিনগুলিতে শিল্পকলা দিয়ে ভরিয়ে তুলতে এরা এগিয়ে আসে প্রত্যেক বছর। আমাদের শহরের এরকম সংস্থাগুলিকে সত্যিই আমি সাধুবাদ জানাই। গতকাল যে কথা বলেছিলাম, শিল্প-সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখা আমাদের কর্তব্য, আর যেহেতু এই সংস্থাগুলি এই কর্তব্য পালন করে চলেছে। তাই আমরা সকল নগরবাসী এই সংস্থাগুলির প্রতি কৃতজ্ঞ।
নন্দলাল বসুর নাম শুনলেই মনে পড়ে যায় সহজ পাঠের কথা। কারণ এই বইয়ের প্রত্যেকটি ছবি শিল্পী নন্দলাল বসু দ্বারা সমৃদ্ধ। সহজ পাঠের বইটির কথা ভাবলেই নন্দলাল বসুর চিত্র শিল্প সম্পর্কে পরিচয় পাওয়া যায়। অন্যান্য চিত্র শিল্পীদের থেকে তিনি এই জায়গাতেই আলাদা। তার শিল্প কার্য তার পরিচয়। শান্তিনিকেতনের নানা জায়গায় তার ছবি পরিলক্ষিত। তার চিত্রশিল্পতে আমাদের বাঙালি ছোঁয়া রয়েছে। প্রত্যেকটি ছবি সহজ সরল ভাবে বাংলার কথা বলে। শান্তিনিকেতনের বহু দেয়াল চিত্র নন্দলাল বসুর হাত ধরেই ফুটে উঠেছে। ছবিগুলি শান্তিনিকেতনে গেলে আপনারা সকলেই দেখতে পারবেন। তার শেষ জীবন শান্তিনিকেতনেই অতিবাহিত হয়েছে।
তিনি বহু পুরস্কারের ভূষিত। এই বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ১৯৫৪ সালে পদ্মভিভূষণ উপাধি পেয়েছিলেন। আপনারা হয়তো সকলেই পরিচিত আরও একটি নামের সাথে তিনি হলেন বিখ্যাত শিল্পী ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজ। তার সমস্ত শিল্পকর্ম শান্তিনিকেতনের অর্থাৎ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু জায়গায় এখনও প্রজ্বলিত। রামকিঙ্কর বেইজ ছিলেন নন্দলাল বসুর ছাত্র। গুরু শিষ্য র
অস্বাভাবিক সুন্দর অ্যাবস্ট্রাক্ট শিল্পকর্ম বহু মানুষের চোখ কেড়ে নেয়।
এরকম একজন মানুষ নন্দলাল বসু , তার জন্মদিন উপলক্ষে দুই সংস্থা দ্বারা আয়োজিত প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল গ্রেস কটেজে। সেখানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নন্দলাল বসু দ্বারা অনুপ্রাণিত আরো দুজন শিল্পীকে নন্দলাল বসু সম্মান জানানো হয়। তার মধ্যে একজন ছিলেন চিত্রশিল্পী শ্রীমতি শ্যামা রায় এবং অপরজন প্রবীণ চিত্রশিল্পী শ্রী নিরঞ্জন শীল। দুজনেই আমাদের নদীয়া জেলার মানুষ। নন্দলাল বসুর চিত্রশিল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দুজনেই দু'রকম ভাবে নিজেদের চিত্র-শিল্পকে সকলের মাঝে তুলে ধরেছেন।
তাদের সমস্ত কাজগুলি রাখা সম্ভব ছিল না, তাই যে ক'টি কাজ ওনারা আমাদের দিতে রাজি হয়েছিলেন, সেই কটি নিয়েই একটি ছোট্ট এক্সিবিশন মতো রাখা হয়েছিল। আমি যেটুকু পেরেছি সেগুলোর সমস্তটা ছবি তোলার চেষ্টা করেছি। আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন ওনাদের চিত্রশিল্পের প্যাটার্ন অথবা আর্ট ফর্ম ।
আজকে এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকুন। পরবর্তীতে এই অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করব। যে কটি ছবি আমি ব্যবহার করেছি, ছবিতে যে চিত্রগুলি দেখতে পাচ্ছেন, আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন চিত্রগুলির প্রকার দুই রকমের। রংয়ের ছোঁয়াতে যে ছবিগুলি দেখা যাচ্ছে সেগুলি শিল্পী শ্যামা রায় দ্বারা সজ্জিত। এর পাশাপাশি যে ছবিগুলিতে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন শুধুমাত্র পেনের মাধ্যমে আবস্ট্রাক ফর্মে কাজ করা হয়েছে, সেই ছবিগুলি শিল্পী নিরঞ্জন শীল মহাশয়ের।