ভ্রমণ পর্বঃ০২ | ঢাকা টু বান্দরবান

haideremtiaz -

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো ও সুস্থ্য আছেন। তো সকলের সুস্থ্যতা কামনা করে আজকে চলে এলাম ঢাকা টু বান্দরবানের দ্বিতীয় পর্ব শেয়ার করার জন্য। আশা করছি ভ্রমণ পর্বের প্রতিটি পর্ব উপভোগ করতে পারবেন।

১ম পর্বের পর

চান্দের গাড়ি করে আমরা নীলগিরির পথে যেতে থাকলাম। যতই গাড়ি ভিতরে যাচ্ছিল চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছিল। পাহাড়ের যত উপরে গাড়ি ঠিক তত উপরে মনে হচ্ছে কুয়াশায় চাদরে চারপাশ ভরে গিয়েছিল। যাওয়ার পথে দেখলাম অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের ঘর বাড়ি! পাহাড়ের উঁচু উঁচু জায়গায় তারা ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে। একটা জিনিস দেখে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছিল। এতো উপরেও বিদ্যুতের পিলার দেখতে পেয়েছিলাম। পাহাড়ের উঁচুতে যাদের ঘরবাড়ি তাদের অনেকের ঘরে বিদ্যুৎ আছে। আবার অনেকের ঘরে নেই। বেশির বাড়িতে দেখতে পেলাম সোলার সেল ব্যবহার করছে। বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরি মনে হয় ৫০-৬০ কিমি এর মতো! সকাল সকাল সোনালী রোদের আলোয় আশপাশের পরিবেশ ঝলমল করতে ছিল।

নীলগিরি যাওয়ার পথিমধ্যে দেখতে পেলাম সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট বসানো। সেখানে সবার আইডি কার্ড চেক করছে। আমাদের মতো অনেকেই এসেছিল ঘুরতে। তারাও দেখি এনআইডি কার্ড দেখিয়ে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে। আমাদের কোচিং থেকে আগেই নির্দেশনা ছিল এনআইডি কার্ড সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হবে। এনআইডি কার্ড ছাড়া যেন কেউ না আসে। যেহেতু আমাদের আইডি কার্ড চেক করবে তাই আমরা সবাই গাড়ি থেকে নামলাম। নামার পর কোচিং এর পরিচালক পবিত্র কুমার দাদা সেনাবাহিনীর এক ভদ্রলোকের সাথে কথা বলেন। উনার আন্ডারে ৯৩ জন মেম্বার এসেছে ঘুরতে সেটাই বলে। সবার দায়িত্ব যেহেতু দাদা নিয়েছিল তাই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা দাদা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপিটা রেখে দেয়। আমাদের এন আইডি কার্ড আর দেখাতে হয়নি। তারপর যার যার গাড়িতে আমরা উঠপ গেলাম।

পাহাড়ি অঞ্চলে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সবার আইডি কার্ড চেক করা হয়। যেহেতু বান্দরবান এর এপাশে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা রয়েছে। তাছাড়া পাহাড়ী সংগঠনও রয়েছে যতদূর জানি। আমাদের গাড়ি আবার যেতে লাগলো নীলগিরির উদ্দেশ্যে। আমরা সবাই মিলে তখন গান ধরলাম। " বকুল ফুল বকুল সোনা দিয়া হাত কেন বান্দাইলি " আরও কতো গান। একেকজন একেক গান বলা শুরু করলো। গানের সাথে সাথে আমরা পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকলাম। যেতে যেতে হঠাৎ দেখা পেলাম জুম চাষের। জীবনের প্রথম পাহাড়িদের জুম চাষ দেখলাম। পাহাড়ের এতো উঁচুতে জুম চাষ করছে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো সেখানে পানির একটা সমস্যা রয়েই যায়। তারপরেও পাহাড়িরা জুম চাষ করছে। তারা যে ভীষণ পরিশ্রমী এটা বুঝার বাকি রইল না।

পাহাড়ে দেখলাম আনারসের চাষ হচ্ছে। রাস্তার পাশে আমগাছের তো অভাব নেই! যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়েও দেখলাম অনেক কলা গাছ। এই কলাগাছগুলো হয়তো প্রকৃতি প্রদত্ত। এগুলার নিজস্ব মালিকানা আছে কি না আমার সঠিক জানা নেই। তবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষগুলোর জীবিকা অনেকটাই পাহাড়কেন্দ্রিক। পাহাড়ে যা চাষ করে অথবা গাছে যে ফলমূল হয় সেগুলো বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করে। আমরা যতই যাচ্ছিলাম রাস্তা মনে হচ্ছিল শুধু বাড়ছেই! যাওয়ার পথে খেয়াল করলাম বেশ কিছু মহিলা যারা কাধেঁ করে কিছু নিয়ে যাচ্ছে। বই পুস্তকে পড়েছিলাম চাকমারা সাধারণত মাতৃতান্ত্রিক। মানে হচ্ছে পরিবারে মাই সব কাজ করে থাকে। তবে পুরুষ যে কিছু করে না ব্যাপারটা এমনও না। নীলগিরি যাওয়ার পথে বেশ কিছু স্পটের দেখা পেলাম। যাওয়ার পথে হাতের বামে দেখতে পেয়েছিলাম ডাবল হ্যান্ত ভিউ! তার সামনে আবার ছিল চিম্বুক পাহাড়। সেটা আবার একটু ভিতরে। কিন্তু আমাদের নীলগিরি পথ যেন পাচ্ছিলাম না।

তারপর অবশেষে চলে এলাম নীলগিরিতে! নীলগিরি মূলত একটা পার্ক আবার রিসোর্ট এর সংমিশ্রণ! ভিতরে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে টিকেট কাটতে হবে । প্রতি টিকেট এর মূল্য ১০০ টাকা করে। টিকেট এর টাকা টা কোচিংই বহন করেছিল। আমরা যারা এক গাড়িতে ছিলাম তারা সবাই টিকেট সংগ্রহ করে ভিতরে প্রবেশ করে গেলাম। ভিতরে প্রবেশ করেই পুরো অবাক! চমৎকার সব ভিউ দেখা যাচ্ছে রিসোর্ট এর ভিতরে। অনেক পর্যটক সেখানে এসে ছবি তুলছে। বলতে গেলে এ নীলগিরি রিসোর্ট টা ছবি তোলার জন্য বেস্ট জায়গা! আমরা গ্রুপের যারা ছিলাম সবাই মিলে ছবি তুললাম। তবে ফোন ম্যাটার করে ছবি তোলায়। ফোনের ক্যামেরা ভালো হলে ছবিও সুন্দর হয়।

চলবে,,,,,,

DeviceOppo A12
Photographer@haideremtiaz
LocationNilgiri,Bandarban