আবোল-তাবোল জীবনের গল্প [ পরিবার-শেষ পর্ব ]

hafizullah -

হ্যালো বন্ধুরা,

আশা করছি শীতের উষ্ণতায় সবাই বেশ ভালো আছেন এবং পরিবারের সাথে মিলেমিশে সময়গুলোকে আনন্দের সাথে উপভোগ করছেন। আমি আবোল-তাবোল জীবনের গল্পে পরিবার নিয়ে কিছু অনুভূতি শেয়ার করেছিলাম এর আগের পর্বে, সেখানে এই কথাও বলেছিলাম যে আরো কিছু অনুভূতি শেয়ার করবো এই সম্পর্কে।

পরিবার আমার কাছে শুধুই পরিবার না, বরং জীবনের পথ চলার অনুপ্রেরণা সংগ্রহের অন্যতম একটি উৎস। পরিবার মানেই আমর হৃদয়ের স্পন্দন, জীবনকে গতিশীল রাখার সবচেয়ে বড় রিচার্জ কেন্দ্র। হয়তো আপনাদের কাছে ভিন্ন কিছু মনে হতে পারে, হয়তো আপনারা আরো বড় কিছু বিবেচনা করতে পারেন কিন্তু আমার কাছে আমার পরিবার মানে আমার পাওয়ার হাউজ। আর পরিবার বিহীন আমি বড্ড বেশী অন্ধকারাচ্ছন্ন কিছু।

আমি পরিবারকে একটি ফুল বাগান হিসেবে বিবেচনা করি, যেখানে নানা রংয়ের কিংবা বর্ণের ফুলের সহঅবস্থান থাকে, কোনটা ঘ্রাণ যেমন অত্যাধিক থাকে ঠিক তেমনি কোনটার ঘ্রাণ কিংবা সুগন্ধি তুলনামূলকভাবে কম থাকে, কিন্তু সবগুলোর সঠিক অবস্থানের কারনেই আমরা সেটিকে বাগান হিসেবে অভিহিত করি না হলে বলতাম শুধুই ফুলগাছ। দেখুন পরিবারের মাঝে সকলের অবস্থান থাকে কিন্তু সবদিক হতে সবাই সমান থাকে না, কারো অনুপস্থিতি যেমন পুরো পরিবারকে ঘ্রাণহীন করে দেয় ঠিক তেমনি কারো উপস্থিতি আবার ঘ্রাণকে বৃদ্ধি করে দেয়।

সকল ফুলের সহঅবস্থানের কারনে আমরা যেমন সেটিকে বাগান হিসেবে আখ্যায়িত করি ঠিক তেমনি পরিবারের ক্ষেত্রেও সেটা প্রয়োজ্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা সকল ক্ষেত্রে যুক্তি মানি এবং বুঝি, শুধুমাত্র পরিবারের বেলায় ভিন্ন চিন্তা করি, স্বার্থটা খুব বেশী প্রকট হয়ে উঠে এখানে। কোন অবস্থায় অন্যের ছোট কন্ট্রিবিউশনকে মেনে নিতে পারি না, কোন অবস্থায় অপর সদস্যের জন্য কোন ছাড় দিতে রাজি থাকি না বরং প্রত্যাশা করি সবাই আমর মতো সমান কন্ট্রিবিউশন করবে এবং আমার বিষয়ে সবাই বেশী ছাড় দিবে। কি অদ্ভুত চিন্তা-ভাবনা!

নিজের দিকটা ঠিক ঠাক বুঝে নিতে চাই কিন্তু পরিবারের অন্যদের বেলায় পাল্টে যাই। সত্যি আমরা কেন জানি নিজের পরিবার কিংবা কাছের মানুষগুলোর ব্যাপারে একটুকুও ছাড় দিতে চাই না! অথচ ভার্চুয়াল জগতের সাথে মিশে অনেক কিছুতেই ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাই, পরিবারের আপন মানুষটির ব্যাপারে খুব বেশী স্বার্থবাদি হয়ে যাই কিন্তু বাহিরের কারোর জন্য নিজেকে খুব বেশী উদার করে তুলতে দ্বিধাবোধ করি না। আশ্চার্যজনক হয়ে উঠছি আমরা দিন দিন, নিজের কাছে এবং নিজের পরিবারের কাছে।

সবাই একই সমান হবে না এবং সকলের অবস্থান একই পর্যায়ে হবে না, এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমরা এটাকে বড্ড বেশী অস্বাভাবিক হিসেবে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করি। যার কারনে আমাদের মানসিকতায় খুব বেশী পরিমাণে পরিলক্ষিত হয় স্বার্থের বিষয়টি। এটা ভুলে যাই যে, যখন আমরা ছোট ছিলাম তখন কিন্তু সবাই সমান সুুযোগ-সুবিধা কিংবা অধিকার ভোগ করতাম, তখন কিন্তু স্বার্থের বিষয়টি আমাদের সামনে আসতে না। কিন্তু যখন আমরা বড় হলাম, নিজের ইনকামের একটা পথ তৈরী হলো, তখন আমরা নিজের স্বার্থ নিয়ে বড্ড বেশী ব্যস্ত হয়ে উঠলাম!

আমার পরিবার মানেই আমার আপনজন, আমার পরিবার মানেই আমার কাছের মানুষ আর ত্যাগ স্বীকার তো মানুষ কাছের কিংবা আপন মানুষদের জন্যই করে নাকি? তাহলে আমরা কি করছি? কাদের জন্য নিজের ত্যাগ? চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আনাটা বড্ড বেশী জরুরী হয়ে গেছে আজ। স্বার্থ জায়গাটা স্বার্থের ভিতরই থাকুক কিন্তু পরিবার এবং পরিবারের মানুষগুলোর প্রতি উজ্জ্বল হয়ে থাকুক ভালোবাসাটা।

Image from Pixabay 1 and 2

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah


আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।



|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||