হ-য-ব-র-ল কাহিনী

hafizullah -

হ্যালো বন্ধুরা,

আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমি পেরেশানির মাঝে আছি তবে চেষ্টা করছি ভালো থাকার। যাইহোক, জীবন মানেই যুদ্ধ আর যুদ্ধ মানেই বেঁচে থাকার লড়াই, আশা করছি পরাজিত হবো না এখানেও। আজ গল্প লেখার চেষ্টা করবো, জানি না আপনাদের কতটা আনন্দিত করতে পারবো, তবে চেষ্টা করে দেখা যাক।

রাফি, রানা, মিলন তিন বন্ধু, মানে দুষ্টু একটা টীম। তিন জনই একই ক্লাসে এবং একই স্কুলে পড়ে। রাফি মোটামোটি পয়সাওয়ালা ব্যবসায়ীর ছেলে, রানা দাপুটে শ্রমিক নেতার ছেলে আর মিলন টীম লিডার স্থানীয় রাজনীতিবিদের ছেলে। যার কারনে পড়াশুনায় খুব একটা ভালো না হলেও বাবাদের কল্যানে এখনো স্কুলে টিকে আছেন। তবে দুষ্টুমির ক্ষেত্রে তিনজনের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন। যেমন রাফি সর্বদা উল্টা পাল্টা বলে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করেন, রানা সব বিষয়ে জিরো পাওয়া বেশী বুদ্ধি সম্পন্ন আর মিলন সবই বুঝেন কিন্তু ঠিক মতো তা প্রকাশ করতে পারেন না। সে যাইহোক, তিনজনের মাঝে দারুণ বন্ধুত্ব, তাদের মাঝে কেউ ফাটল ধরাতে পারে নাই।

কিন্তু তাদের নিয়ে ক্লাসের শিক্ষক সর্বদা ভীত অবস্থায় থাকেন, কখন কি করে বসে এটা চিন্তা করে। যার কারনে সব শিক্ষকরা ক্লাসে ঢুকেই তাদের সবার সামনের সীটে বসতে বলেন, যাতে পিছন হতে কেউ দুষ্টমি করতে না পারে। যেমন একদিন ক্লাস চলাকালীন সময়ে রানা দাঁড়িয়ে গেলেন তারপর হাত উঁচু করে বললেন স্যার আমার একটা বিষয় জানার ছিলো। শিক্ষকঃ কি জানতে চাও বলো? রানাঃ স্যার আপনি কি বেল্ট ব্যবহার করেন? শিক্ষকঃ চামড়ার বেল্ট , এই বলে মাঝার বেল্ট খুলে তাকে দেখিয়ে বললো, আর কিছু জানার আছে? না থাকলে এবার বসো। রানাঃ না না না স্যার এই বেল্ট না, ভূড়ি কমানোর জন্য আমার আম্মু বাড়ীতে এক ধরনের বেল্ট ব্যবহার করেন, তাই জানার ইচ্ছা হলো আপনার ভূড়ি কমানোর জন্য কোন ধরনের বেল্ট ব্যবহার করেন। এই কথা শুনে শিক্ষক পড়া বাদ দিয়ে ক্লাস হতে বের হয়ে চলে গেলেন।

আর রাফিতো আরো এক ধাপ এগিয়ে রয়েছেন। একবার তো স্কুলে রটিয়ে দিলেন বিজ্ঞান স্যার অন্য একজন ম্যাডামের সাথে প্রেম করেন, কিন্তু আদৌ এই রকম কোন ঘটনা ছিলো না। কিন্তু বিজ্ঞান শিক্ষক একটু সাহসী হওয়ার কারনে সেটা বেশ ভালোভাবে উতরে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাফিকে থামাতে পারেন নাই। বার্ষিক আবৃত্তি প্রতিযোগীতায় একবার রাফি নিজের নাম দিলেন অশংগ্রহন করার জন্য, কিন্তু সকল শিক্ষকের আপত্তি থাকার পরও প্রধান শিক্ষক তার নাম নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেবার সে স্কুলের সেই প্রতিযোগিতায় সাথে করে তেঁতুল নিয়ে এসেছিলেন, এরপর সেটা দেখিয়ে যা আবৃত্তি করেছিলেন তা শুনে শিক্ষকরা চুপ থাকলেও সকল ছাত্ররা হাসতে হাসতে অস্থির হয়ে গিয়েছিলেন। মিলন এমনিতে দুষ্ট না হলেও ঠিক ঠাক কিছু উপস্থাপন করতে পারেন না, ভেতরে থাকে এক আর বাহিরে বেরোয় আরেক। একবার পরীক্ষার খাতায় গরুর রচনা লিখতে গিয়ে গরুর সাথে রাখাল নিয়ে আসলেন তারপর রাখালের গান দিয়ে পুরো রচনা শেষ করে দিলেন, সেই রচনা লিখতে গিয়ে মিলন ১১ খানা এক্সট্টা লুজ নিয়েছিলেন।

কি চিন্তা করছেন? এই ধরনের ছেলে আজকাল আছে নাকি? সত্যি আছে এবং তাদের যন্ত্রণা সহ্য করেই শিক্ষকদের ক্লাস করাতে হয়। কারন এখন আর সেই যুগ নেই যে শিক্ষকদের সম্মান দেয়া হবে, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার চেষ্টা করা হয়। যার কারণে এখনকার ছাত্ররা পাশ করেন কিন্তু মানুষ হতে পারেন না। আসলে শিক্ষকদের অসম্মান আর অমর্যাদা করে কেউ কোন দিন কোন কিছুর শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে নাই, আর পারবেও না। বরং যারা শিক্ষকদের সাথে বেয়াদবি করেছে, একটা সময় তারা ধ্বংসের শেষ সীমানায় এসে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমানে টাকা আর রাজনীতির গরমে শিক্ষকদের অনেক কিছুই হজম করে চাকুরী করতে হচ্ছে।

হঠাৎ করে মিলনের মাঝে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো, ইদানিং একটু কম কম দুষ্টুমি করে কিন্তু ক্লাসে নিয়মিত থাকে তবে চুপচাপ। মনে হয় কোন বিষয় নিয়ে খুব বেশী চিন্তিত। কিন্তু রাফি আর রানা কিছুই বুঝতে পারে না, মিলন যেহেতু তাদের লিডার সেহেতু জোরও করতে পারছেন না। তবে মাঝে মাঝে তার খাতায় কিছু কবিতা দেখতে পান, ছোট ছোট কবিতা কিন্তু সবগুলো প্রেম সংক্রান্ত। আর কবিতাগুলো আস্তে আস্তে ক্লাসের সকলের নিকট ভাইরাল হতে শুরু করে এবং সবাই কবিতাগুলো বেশ পছন্দ করে তাকে বাহ বাহ দিতে শুরু করে। এটা দেখে রাফি আর রানাও কবিতা লেখার চেষ্টা করে কিন্তু তাদের যে অবস্থা, পেটে বোমা ফাটালেও মুখ দিয়ে কিছু বের হবে না। তাই রাফি আর রানা সিদ্ধান্ত নেয় মিলনের বাড়ীতে যাবে এবং পুরো রহস্য উদঘাটন করবে।

মিলন হঠাৎ একদিন ঘুম হতে উঠে দেখেন সে খাটের নীচে ঘুমিয়ে আছেন, কিন্তু ঘটনার কিছুই বুঝতে পারছেন না। ঘরের দরজায় ঠিক ছিটকানি লাগনো। তারপর আরো একদিন ঘুম ভাঙ্গার পর নিজেকে বাথরুমের কমোডে আবিস্কার করলেন। এবার কিন্তু বেশ চিন্তিত হয়ে গেলেন মিলন, মনে মনে বেশ ভয় পাচ্ছেন কিন্তু কাউকে বলতে পারছেন না। তবে ভয় পেলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন এবং বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকছেন। এর মাঝে একদিন ঘুম ভাঙ্গার পর দেখলেন তার বিছানার উপর খাতাগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে, কয়েকটি পৃষ্ঠা ছেড়া কিন্তু তাতে ছোট ছোট প্রেমের কবিতা লেখা । মিলন ভেতরে ভেতরে ভীত হলেও একটু খুশিই হলো উপর দিয়ে। যাক একটা জিনিষতো পাওয়া গেলো, কবিতাগুলো নিজের নামে চালানো যাবে এখন কিন্তু পুরো বিষয়টি কারো সাথে শেয়ার করার সাহস পাচ্ছেন না। এমনিতে সবাই জানে সে সবই বুঝে কিন্তু কিছুই বলতে পারে না, তাই কবিতাগুলো নিজের নামে চালানো কোন ব্যাপারই না।

এদিকে রাফি আর রানা বুদ্ধি করে মিলনের বাড়ীতে আসলেন রাতে ঘুমাবে বলে, তাদের মূল উদ্দেশ্য কবিতার রহস্য উদঘাটন করা। তিন বন্ধু গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে গেলেন, কিন্তু ঘুম ভাঙ্গার পর রাফি নিজেকে আবিস্কার করলেন ঘাটের নীচে আর রানা নিজেকে আবিস্কার করলেন বাথরুমের কমোডে কিন্তু পড়নে কোন কিছুই নেই, রানার চিৎকারে মিলনের ঘুমা ভাঙ্গলো এবং রাফিকে দুইজন মিলে উদ্ধার করলো। তারপর তিনদিন রাফি আর রানা মিলনের সাথে কোন কথা বলে নাই, তাদের চিন্তা একটাই মিলন এগুলো কিভাবে ঘটালো? ....... (চলবে)

কমিউনিটিতে এটাই আমার প্রথম গল্প লেখা, হয়তো কাহিনী কিংবা বানান সংক্রান্ত অনেক কিছুই ঠিক ঠাক নাও থাকতে পারে, বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। তবে এ সংক্রান্ত যে কোন পরামর্শ সানন্দে গ্রহণ করা হবে।



Image taken from Pixabay

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah



আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।


|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||