বন্ধুরা,আপনারা অনেকেই জানেন আমার অনার্স লাস্ট ইয়ারের এক্সাম চলছিলো।আর তাই একটা বড় চাপ চলে গেল এক্সাম শেষ হয়ে গিয়ে।আসলে এই বছরের এক্সামের অনুভূতি ছিল একদম ভিন্ন ধরনের।সমাজের কিছু দানব মাঝে মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।আসলে আমরা কেউই কোথাও নিরাপদে নেই।একটা অজানা আতঙ্ক আর কতভয় যেন ঘিরে ধরে আমাদের জীবনকে। তবুও ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের মাঝ দিয়ে আমাদের ছুটে চলা।
এইবার হয়তো অনেকেরই জানতে ইচ্ছে করছে,আমি কেন এক্সামের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকির কথা বলছি!আসলে তার পেছনে অবশ্য একটা কারন আছে।ইউটিউবে একটা খবর ঘোরাফেরা করছিলো কয়েক দিন আগে থেকেই।আসলে সেই খবরটি বর্ধমানের টোটো স্ট্যান্ডকে ঘিরে।আর বর্ধমানে নানা উপজাতির বসবাস রয়েছে।বাঙালির সংখ্যা এখানে অনেকটাই কম।কলকাতা কিংবা তার আশেপাশের জায়গাগুলোর মতো একচেটিয়া বাঙালির বসবাস এখানে নেই।যাইহোক বর্ধমানে স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি রয়েছে সাঁওতালি,বিহারী,পাঞ্জাবি,আদিবাসী, বাগদি ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মানুষ।
আসলে সেই খবরে এমন ঘটনার উল্লেখ ছিল, একটি টোটোতে টোটোওয়ালাসহ আরো দুইজন করে ব্যক্তি থাকতো।তারপর কোনো মেয়ে প্যাসেঞ্জার সেই টোটোতে উঠলে অন্য জায়গায় নিয়ে চলে যাচ্ছে তারা।কত ভয়ংকর ব্যাপার তাইনা!তাই শেষ এক্সামগুলিতে আমি ঝুঁকি নিতে চাইনি।ট্রেনের কামরাগুলি আলাদা উঠলেও স্টেশনে নেমে মিলিত হয়ে যেতাম আমরা 6জন।যদিও দুইজন আমার ডিপার্টমেন্টের হলেও বাকিরা ছিল অন্য ডিপার্টমেন্টের।কিন্তু আমার তারা চেনা ছিল তারপর এক্সাম যেহেতু অন্য কলেজে পড়েছে।তাই দর কষাকষি করেই সবাই উঠে পড়তাম টোটোতে।কিন্তু শেষদিন আমি যেহেতু আগের ট্রেন ধরে নিয়েছিলাম বাস প্রব্লেমের জন্য তাই আগে আগেই পৌঁছে ছিলাম এক্সাম সেন্টারে।আসলে আমাদের এক্সাম মঙ্গলবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও রবিবার 21 এ জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ দিবস থাকার কারণে এক্সাম পিছিয়ে বৃহস্পতিবার অবধি করা হয়।
আমাদের একটা সুবিধা হয়েছিল অন্য বছর অন্য কলেজে এক্সাম দিলেও আমাদের এই বছর এক্সাম দিয়েছে সেই বিবেকানন্দ কলেজে।যেখানে আমরা বাকি সেমিস্টারগুলিও এক্সাম দিতে গিয়েছিলাম।তাই পথঘাট বেশ খানিকটা চেনা হয়ে গিয়েছে,তবুও টোটোতে উঠলেই যেন সেই অজানা ভয় কাজ করেই যায়।শেষ দিন আমি তাই একটু ভয়ে ভয়ে দাদার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতে পুরো রাস্তা টোটোতে পাড়ি দিয়েছি।যাইহোক সবাই প্ল্যান করেছিলো শেষ দিন তাই ওই কলেজ আর যাওয়া হবে না।তাই সবাই এক্সাম শেষে অনেক ছবি তুলবে আর বিরিয়ানি খাবে।কিন্তু এক্সাম শেষে আমার এতটাই ক্লান্ত আর অস্বস্তিকর অনুভব হচ্ছিলো যে, আমি কোনোরকম একটি দুটি ছবি তুলেই চলে এসেছি।আসলে বেশ খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে এই কলেজের।এই জায়গার সুন্দর ভাস্কর্যগুলি নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে দেওয়ালের গায়ে।রং করলে অনেক সুন্দর দেখা যাবে প্রতিচ্ছবিগুলি।এখানে মায়ের কোলে সন্তান,তীর-ধনুক নিয়ে শিকারি,লালন ফকিরের একতারা হাতে ইত্যাদি দৃশ্য ফুটে উঠেছে।সবগুলো দৃশ্য একত্রে দেখতে কোনো পৌরানিক কাহিনীর মতোই লাগছে।
তারপর যারা একসঙ্গে যাই তারাও কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত আবার বললো বিরিয়ানি খেতে যাবে।কিন্তু আমার শরীর এতটাই ভেঙে আসছিলো তবুও আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম ওদের জন্য।তারপর আমার এক বান্ধবী বললো,তোর যেহেতু শরীরটা খারাপ লাগছে তাই তুই এখুনি চলে যা।নাহলে ট্রেন পাবি না 1.40 এর আমাদের এক্সাম 1 টার সময় শেষ হয়ে যায়।তখন আরো 10 মিনিট পার হয়ে গিয়েছিলো,একজন অন্য ডিপার্টমেন্ট এর চেনা মুখকে খুঁজে পেলাম।তারপর বাস ধরে তার সঙ্গে পুরো ট্রেনের পথ পাড়ি দিলাম।এতটাই খারাপ লাগছিলো যে আমি কথা বলার মতোই অবস্থায় ছিলাম না।তারপর অনেক কষ্টে স্টেশন থেকে আমাদের বাড়ি অব্দি এলাম।টোটো ওয়ালার কর্তব্য অন্য প্যাসেঞ্জার না থাকলে আমাকে কিছুটা পথ এগিয়ে দেওয়ার কিন্তু দুপুরবেলা না যাওয়ার অজুহাতে আমার কাছ থেকে ভাড়া বেশি নিয়ে তবেই এগিয়ে দিলো।এতটাই শরীরটা খারাপ লাগছিলো যে আমি বাধ্য হলাম বেশি ভাড়া দিয়ে আসতে।এমন দুর্বল পরিস্থিতির শিকার আমাকে আগে কখনোই হতে হয়নি যাইহোক শেষমেষ বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলাম ওটাই বড় ব্যাপার ছিল আমার জন্য।
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান,বীরহাটা |
আমার পরিচয় |
---|