আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
অনিকের সাথে আমার পরিচয় আজ থেকে তিন বছর আগে করোনার মধ্যে। ২০২১ সালে একদিন আমার বন্ধু লিখনের সাথে ঘুরতে বের হয়ে পরিচয় হয় অনিকের সাথে। অনিক ছিল আমার বন্ধু লিখনের বন্ধু কলেজের বন্ধু। তারপর থেকে প্রায়ই অনিকের সাথে দেখা হতো। ফেসবুকেও দুজন যোগাযোগ শুরু করি। বেশ ভালো ছেলে একেবারে শান্তশিষ্ট। আমার কখনো মনে হয়নি আমরা সরাসরি বন্ধু না। লিখনের সাথে যখনই ওদের এলাকায় গেছি বেশ ভালো ব্যবহার করেছে ও। দেখতে দেখতে তিনটা বছর কেটে গেল। রবিবার সন্ধ্যার একটু আগের কথা। অন্যদিনের মতো আমি বাজারে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি। সারাদিন বাড়িতে থাকাই একটা একঘেয়েমি চলে আসে। এইজন্য একটু ফ্রেশ হতে বাজারের দিকে যাওয়া। আমি বের হবো এমন সময় হঠাৎ লিখনের ফোন।
কিন্তু লিখন ফোনের ঐপাশ থেকে যেটা বলল সেটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। লিখন ফোন করেই যখন কথা শুরু করল ওর কথার মধ্যে একটা ইতস্তত ভাব। ও বলে উঠল ইমন তুই কোথায়। বললাম আমি বাজারে যাব কাজ আছে। জবাবে লিখন বলল পরে যা তাড়াতাড়ি বের হয় অনিকের বাবা মারা গেছে। কথাটা শুনে প্রথমে আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে ব্যাপার টা ধরতে পারি। আমি বলি ঠিক আছে আমি বের হচ্ছি তুই তাড়াতাড়ি আই। লিখন বেশি দেরি করে নাই। দুজন মিলে বাইকে করে অনিকের বাড়িতে গেলাম। আমাদের বাড়ি থেকে ওর বাড়ির দূরত্ব প্রায় ২৫ মিনিটের। গিয়ে দেখি অনিকের বাবার দেহটা তখনও অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই রয়েছে। বেশ কিছু পুলিশ সেখানে আছে। এবং একদিকে দাহ করার আয়োজন চলছে। ।
ঐসব খেয়াল না করে অনিকের সঙ্গে দেখা করার জন্য ওর বাড়িতে গেলে দেখি অনিক শুয়ে আছে। অনিকের কোন জ্ঞান নেই বললেই চলে। প্রচণ্ড কান্নাকাটির কারণে ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে বা ঘুমিয়ে আছে এমন কিছু। এরপর আমরা দুজন বাইরে আসি। অনিকের এলাকার এক বন্ধু দীপ্তর থেকে তখন পুরো ঘটনা টা জানতে পারি। পারিবারিক অশান্তির কারণে অনিকের বাবা আত্মহত্যা করে। ব্যাপার টা খুবই দুঃখজনক। একেবারেই মেনে নেওয়ার মতো না। পুলিশ প্রথমে একটু ঝামেলা করলেও এলাকার চেয়ারম্যান পক্ষে থাকাই সেরকম কিছু করতে পারেনি। আত্মহত্যা চেষ্টা করার পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে মোটামুটি সুস্থ্য হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে অবনতি হলে চিকিৎসা এর অভাবে মারা যায় এমনটা অভিযোগ করছিল ওরা। যা কিছু হয়ে থাক সবকিছুই নিয়তি ছিল। পুলিশ যখন সবকিছু দেখে গেল তখন রাত ৮ টা।
এরপরে দেহটা ওদের ধর্মমতে নেওয়া হয় শ্মশানে। অন্যরা ঐটা নিয়ে ব্যস্ত থাকাই আমি এবং লিখন অনিক কে সামলায়। আমরা ওকে নিয়ে শ্মশানে যায়। বলতে গেলে এটা ছিল আমার প্রথমবার শ্মশানে যাওয়া। একেবারে গ্রামের মধ্যে তার উপর লোডশেডিং সবমিলিয়ে খারাপ একটা পরিস্থিতি। সব কাজ যখন শেষ হয় তখন রাত সাড়ে এগারো টা। আমি বাড়িতে ফিরি ১২ টার পর। সোমবার বিকেলে আমি এবং লিখন অনিকের সাথে দেখা করতে যায়। ওর উপর দিয়ে যে একটা ঝড় চলেলে গেল। ভাবলাম গিয়ে একটু কথা বললে হয়তো ওর ভালো লাগবে। কিন্তু গিয়ে দেখি ও এখনো ঐভাবে। ঠিকভাবে কথা বলছে না একেবারে নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে। অনেক জোর করে বাইরে নিয়ে আসলাম একটু হাঁটাহাঁটি করে কথা বলে আবার বাড়িতে দিয়ে আসলাম। আসলেই মানুষের জীবন কতটা অদ্ভুত। চলে যাওয়া নিশ্চিত হলেও অনিক তার বাবার এইরকম অনিশ্চিত যাএা মেনে নিতে পারছে না।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।