আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
বিড়াল আমার একেবারেই পছন্দ না। তবে ইদানিং আমার বাড়িতে থাকা বিড়াল টা যেন আমাকে একটু বেশিই বিরক্ত করে। বাড়িতে থাকলে সারাক্ষণ রুমের সামনে এসে ডাকাডাকি করবে। কখনো রুমের চলে আসবে সুযোগ পেলে আমার খাবারেও মুখ দেবে। এগুলো একেবারেই সহ্য হয় না আমার। মাঝে মাঝে মনে হয় বিড়াল বাড়িতে পালন করা শুরু করেছিল কে? তাকে পেলে না একটা কিছু করে ফেলতাম।
বাড়িতে থেকে আর ভালো লাগছিল না। এইজন্যই ভাবলাম যায় একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। বাইরে গিয়ে ঘোরাঘুরি করে মোটামুটি ঘন্টাখানেক পর রুমে এসে দেখি হুলস্থুল কান্ড। বিড়াল টা আমার রুমের ১২ টা বাজিয়ে দিয়েছে। আমার বইগুলো ফেলে দিয়ে একেবারে যা তা করে ফেলেছে। এমনটা সে প্রায়ই করে। এটা দেখে আর সহ্য হলো না। জোরে ডাকা শুরু করলাম
মা!!মা কোথায় তুমি এদিকে এসো।
কী হয়েছে রে??
দেখ তোমার বিড়াল টা করেছে কী? আমি কিন্তু ওকে একেবারে তাড়িয়ে দিব এই বাড়ি থেকে। এই কথাটা বলার পরেই বিড়াল টা যেন মিউ মিউ করে আমার কথার প্রতিবাদ করল।
এভাবে বলছিস কেন। ও তো একেবারে নিষ্পাপ একটা প্রাণী। ওর সঙ্গে কী তোর কোন শএুতা আছে? হয়তো ভুল করে ফেলে দিয়েছে।
ভুল করে ফেলে দিয়েছে। এখন এগুলো ঠিক করবে কে। আমি পারব না।
ঠিক আছে আমি ঠিক করে দিচ্ছি তারপরও তুই আমার বিড়াল টাকে কিছু বলিস না। দেখ তো কী সুন্দর লক্ষী একটা বিড়াল। বাড়িতে থাকলে ভালোই তো লাগে।
মায়ের কথাটা শুনে আমার মনে হলো কী দরকার একটা বিড়ালকে নিয়ে আদিক্ষেতা দেখানোর। একটু রেগে গিয়ে বললাম
ঠিক আছে তুমি তাহলে ওকে নিয়েই থাক আমি চলে গেলাম। যওসব ভালো লাগে না।
মাঝে মাঝে মনে হতো আমার মায়ের সন্তান মনে হয় দুইটা একটা ঐ বিড়াল এব অন্যজন আমি। দুপুরে খাবার দেওয়ার সময় মা আগে ওকে খেতে দিত তারপর আমাকে। মাঝে মাঝে আমার সহ্য হতো না এসব।
প্রতি মাসেই আমি একটা করে ট্যুর দেয়। এই মাসের ট্যুরে যাব আগামীকাল। ফিরতে ফিরতে একসপ্তাহ পরে। তখন ভাবলাম যাইহোক এই বিড়াল টা থেকে তো মুক্তি পাব। মা তো আর ওকে বাড়ি থেকে তাড়াবে না। সেজন্য আমিই যায় ঘুরে আসি।
বন্ধুদের সাথে দারুণ একটা ট্যুর দিয়ে বাড়ি ফিরলাম সাতদিন পর। আমার মনটা বেশ ফুরফুরে। মায়ের জন্য বেশ কিছু জিনিস নিয়ে এসেছি। বাড়িতে এসে মা কে যখন সেগুলো বের করে দিচ্ছি বিড়াল টা পাশেই এসে বসলো। বসে যেন মিউ মিউ করে কিছু বলতে চাইলো। আমি কিছু ধরতে পারলাম না। তখন হঠাৎ মা বলে উঠল
হ্যা রে বিড়াল টার জন্য কিছু নিয়ে আসিস নি।
ওর জন্য আমি আবার কী নিয়ে আসব।
ও তো মিউ মিউ করে সেটাই বলছে। মা একটা আত্মবিশ্বাসের সাথে যেন কথাটা বলল।
মা এসব বাদ দাও তো ভালো লাগে না। এসব আদিক্ষেতার কোন মানে হয়।
এভাবে আরও কিছুদিন চলে গেল। তবে হঠাৎ আমি একটা জিনিস খেয়াল করলাম। বিড়াল টা আর আগের মতো আমাকে বিরক্ত করে না। আমার ঘরেও আসে না। আমার রুমের সামনে মিউ মিউ করে ডাকেও না। ও যেন একেবারে নীরব হয়ে গিয়েছে। সারাদিন বারান্দায় শুয়ে থাকে। মায়ের মুখে শুনলাম ইদানিং নাকী খাওয়ার উপরও তার আর মন নেই। শুধু এভাবে সারাদিন বসে থাকে। যাইহোক ওসব ভেবে আমার কাজ নেই। আগামীকাল আমি এক বন্ধুর বাড়িতে যাব। ওর ওখানে সপ্তাহ খানেক থাকব ঠিক করেছি। সেই পরিকল্পনা করেই বাড়ি থেকে বের হলাম।
আমার বন্ধুর বাড়িতে যেতে প্রায় চার ঘন্টার মতো সময় চলে গেল। কিন্তু ওখানে গিয়ে কেন জানি ভালো লাগছিল না। মনটা কু ডাকছিল। বার বার মনে হচ্ছিল কেউ হয়তো আমাকে স্মরণ করছে। আমাকে খুব করে ডাকছে।সারা রাত জেগে থাকলাম। একটুও ঘুম হলো না। না এবারে আর থাকা হবে না। পরের দিন ই বন্ধুকে বিদায় জানিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
বাড়িতে এসে দেখি আমার মা একটু চিন্তিত। আমি যে এতো দ্রুত এসেছি সেটা আমার মা খেয়ালই করে নাই। এক মনে কিছু একটা চিন্তা করছে।
কী হয়েছে মা। আমি ফিরে এসেছি। সেটা খেয়াল করেছ??
হ্যা দেখেছি।
তবে কিছু জিজ্ঞেস করছ না যে। কিছু বলছ না যে। কিছু কী হয়েছে।
হ্যা হয়েছে। তোর শএু দূর হয়েছে।
কথাটা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমার শএু দূর হয়েছে বলতে??
কাল তুই যাওয়ার পর থেকেই বিড়াল টাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না।
ঠিক করে খুজেছ সব জায়গাই।
হ্যা খুজেছি কিন্তু পাচ্ছি না। কাল তুই যাওয়ার পরেই শেষ দেখেছিলাম। এর আগে এতোটা সময় ও কখনোই আমার নজরের বাইরে থাকেনি।
কেন জানি ব্যাপার টা আমারও খারাপ লাগছিল। আমি বাড়ি না থাকলে মা আমার রুমে যায় না। যাইহোক আমি রুমে ঢুকেই আতকে উঠি।
দেখি বিড়ার টা আমার টেবিলের উপর পড়ে আছে। কোনো সাড়াশব্দ নেই। আমার আর বুঝতে বাকি থাকলো না বিড়াল টা মারা গিয়েছে।
মূহূর্তের মধ্যে আমার মনটা ভারী হয়ে আসলো। আমার কী হয়ে গেল ব্যাপার টা আমি মোটেই নিতে পারলাম না।
তবে কী ওই আমাকে আহবান করছিল। নিজের শেষ সময়ে আমাকে নিজের পাশে চাইছিল। সেজন্যই আমি ঐরকম অনূভব করছিলাম। এখন পযর্ন্ত এসব প্রশ্নের উওর আমি পাইনি।
মাঝে মাঝ ঘুমের মধ্যে শুধু বিড়াল টার সেই আহবান শুনতে পাই মিউ মিউ মিউ......
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।