New to Nutbox?

হতাশা....😔

5 comments

bristychaki
69
2 days agoSteemit7 min read

হ্যালো বন্ধুরা

মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সকল সদস্যগণ,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?পরম করুণাময় ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি।

আমি @bristychaki,আমি একজন বাংলাদেশী। আমার বাংলা ব্লগ এর আমি একজন ভেরিফাইড ও নিয়মিত ইউজার।আমি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। প্রতিদিনের মতো আমি আজও নতুন একটি নতুন ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি।আশাকরি আমার আজকের ব্লগ টি আপনাদের ভালো লাগবে।

হতাশা বা মানসিক অবসাদ এমন এক অবিচ্ছিন্ন অনুভূতি যার জন্য মানুষ তার স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ গুলিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে যা কিনা একসময় কখনো তার কাছে উপভোগ্য ছিলো।অবসাদ মানুষের মনে জীবনের প্রতি এক গভীর বিতৃষ্ণা নিয়ে আসে যা তার প্রতিদিনের জীবনে কাজ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য এক অক্ষমতা সৃষ্টি করে।মানসিক অবসাদগ্রস্ত মানুষেরা নিজেকে অপর্যাপ্ত মনে করে। তারা অনুভব করে যে তারা অন্যের পক্ষে যথেষ্ট নয় বা উপযুক্ত নয় যা তাদের ভাঙা জিনিসের মতো অকেজো বোধ করাতে পারে। তারা মনে করে যে তারা হতাশাগ্রস্থ বোধ করে বলেই হয়তো তাদের সংসারে আর কোনো উপযোগিতা নেই।এরকম সমস্যার মধ্যে দিয়ে যারা দিন পার করে তারাই শুধু জানে জীবন কতোটা কঠিন হয়ে পড়ে।

IMG_20241122_142537.jpg

একটা সময় ছিলো তখন হতাশা কি জিনিস বুঝতেই পারতাম না।কারণ তখন জীবন টাকে জানা বা বোঝার মতো বয়স জ্ঞান কোনোটাই হয়নি।যখন বিয়ের পর প্রথম শ্বশুর বাড়িতে আসি প্রথম সপ্তাহ খানেক বেশ ভালোই ছিলো সবকিছু,হঠাৎ করেই একদিন দেখি শাশুড়ী মায়ের রুমে সবাই কি বিষয় নিয়ে যেনো আলোচনা করছে!এগুলো নিয়ে খুব একটা জানার আগ্রহ আমার ছিলো না তার কারণ হলো তখন এগুলো বোঝার মতো ক্ষমতা আমার হয়নি।তারপরও একটু আন্দাজ করতে পারলাম যে পরিবারের সবার খাওয়াদাওয়া আরও বিভিন্ন যে বিষয় গুলো থাকে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো।আমার স্বামী কতো টাকা দিবে ভাশুর কতো টাকা দিবে এবং দেবর কতো দিবে এগুলো বিষয় নিয়ে।পরিশেষে সবকিছু ঠিকঠাক হলো আমাদের পরিবারের খাবার যে চাল লাগে তার দায়িত্ব আমার দেবরের আমার স্বামী মাসে তিন হাজার করে টাকা দিবে আর বাকি টাকা মিল করে আমার ভাশুর মাসিক বাজার করবে।

দেবর যখন এক বস্তা চাল কিনে আনলো সেদিন প্রথম অনুভব করলাম যে কেমন পরিবারে আমার বিয়ে হয়েছে!আমার পরিবার খুবই সম্পদশালী তা বলবো না।তবে এতটুকু মনে আছে আমাদের বাড়িতে যেদিন ধান বিক্রি হতো সেদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধু ধান মাপা বস্তা করা এগুলোই চলতো..।সেখান থেকে গিয়ে এক বস্তা চাল কিনে খাওয়া দেখে হতাশ হওয়ার কথা ছিলো!সেদিন কিন্তু আমি হতাশ হইনি।এভাবেই কয়মাস কেটে গেলো।তারপর জীবনের আরেক ধাপে পদার্পণ করলাম।স্বামীর সাথে সংসার করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় গেলাম।ধানমন্ডি জিগাতলায় ছোট্ট একটা রুম চব্বিশশো টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়েছে,সেই রুমে একট খাট দুইটা চেয়ার আর একটা টেবিল ফ্যান ছিলো আমি বললাম এগুলো কার?তখন আমার স্বামী বললো আমার বন্ধুর রুম ছিলো এটা ওর পরিবার বাড়িতে পাঠিয়েছে তাই রুমসহ এগুলো আমাদেরকে দিয়ে গেছে,আবার যখন আসবে তখন ফেরত দিতে হবে।এটা শুনে খুব একটা খারাপ লাগেনি কারণ তখন মনে অন্য রকমের একটা ভালো লাগা ছিলো।যাইহোক ঐদিন পাশের রুমের বৌদি আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলো তাই রান্না করতে হয়নি।পরেরদিন যখন রেশনের চালের ভাত রান্না করতে যাই ভাত বসিয়ে দিয়েছি কিন্তু চাল কিছুতেই সিদ্ধ হচ্ছিলো না,আর এতো পরিমাণে দুর্গন্ধ আসছিলো তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়...!খেতে বসে আমার দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো,এটা ভেবে যে জন্মের পর থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত কখনোই মোটা চালের ভাত আমরা খাইনি।আমাদের বাড়িতে বারোমাসের জন্য চাল একবারে করে রাখতো এবং সেটা ছিলো উন্নতমানের চাল আমরা সবসময়ই একইরকমের ভাত খেয়ে বড় হয়েছি।হতাশ হওয়ার কথা ছিলো সেদিন কিন্তু আমি হতাশ হয়নি।

আমার স্বামী তখন মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা বেতন পায়।সেখান থেকে চব্বিশশো টাকা শুধু ঘরভাড়া দিতে হতো আর বাকিটা দিয়ে কোনো রকমে বাজারঘাট করে খেতে হয়েছে আমাদের,তাই রেশনের চাল খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না।রেশনের চাল খাওয়াটাকে নিজের একটা অভ্যাসে পরিণত করলাম আর আস্তে আস্তে সেটাই আমার অভ্যাস হয়ে গেলো।আমি যে রুমে থাকতাম তার পাশে দুইটা রুম ছিলো বড় রুমটাতে এক দাদা বৌদি থাকতো আর পাশে আরেকটা ছোট রুম ছিলো ওখানে তিনটা ব্যাচেলর ছেলে থাকতো।আমরা সবাই একই রান্না ঘরে রান্না করতাম একই ওয়াশরুম ব্যবহার করতাম সেদিন হতাশ হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আমি হতাশ হয়নি।পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে শুরু করলাম এবং আমি সেটা খুব ভালোভাবে করতে পেরেছিলাম।

সেই কষ্টের মাঝে রেশন বিক্রি করে অল্প অল্প টাকা জমিয়ে পয়ত্রিশশো টাকা দিয়ে একটা খাট কিনলাম।তার কারণ হলো মানুষের খাটে থাকি যেকোনো সময় এসে চাইতে পারে তখন কি করবো!যেদিন খাট কিনে আনলাম তখন কি যে শান্তি লাগছিলো মনে হচ্ছে অনেক বড় কিছু পেয়েছি যার আনন্দ অন্য রকমের ছিলো।এভাবেই আস্তে আস্তে আমরা সংসার গোছানো শুরু করলাম বড় মেয়ের জন্ম হলো।আমরা না খেয়ে থাকিনি কখনো কিন্তু অনেক কষ্ট করেছি আমাদের জীবনে শখ বলে কোনো শব্দ ছিলো না।আমরা কখনো কোথাও ঘুরতে যাইনি বড় কোনো শপিংমল থেকে কেনাকাটা করিনি জীবন চলার জন্য যতোটুকু দরকার ততোটুকই করেছি।এভাবেই বেশ ভালোই চলছিলো জীবন,আর এতেই অনেক খুশি ছিলাম।

ভগবানের অশেষ কৃপায় দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের সাথে সাথে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটলো।আস্তে আস্তে আমাদের সবকিছুই ভালো হতে লাগলো।আমার স্বামীর বেতন ডাবল হয়ে গেলো তখন আর আমাদের কোনো সমস্যা থাকলো না বরং খেয়েপড়ে বেশ ভালো টাকা থাকতো।তখন চিন্তা করলাম আর সাবলেটে থাকবো না।দীর্ঘ ছয় বছর মানুষের সাথে থেকেছি।আমি সহজসরল প্রকৃতির মানুষ ছিলাম তাই খুবই কষ্ট করে থেকেছি আমার সমস্যা গুলো কেউ একটুও ছাড় দিতো না কিন্তু আমি তাদের সুবিধার জন্য সবকিছু ছাড় দিতাম।তখন আমি সাড়ে ছয় হাজার টাকা দিয়ে আলাদা ফ্ল্যাট নিলাম।আর সেখানে দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস শুরু করলাম।

ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় খুবই ভালো ছিলাম টাকাপয়সা সবদিক দিয়েই অনেক সুখী ছিলাম।এভাবেই বেশ চলছিলো আমাদের জীবন।এই সুখ আমার বেশিদিন সহ্য হলো না হঠাৎ করেই একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লাম এবং সেটা খুবই গুরুতরভাবে অসুস্থ।ছোট বাচ্চা নিজের অসুস্থতা সবমিলিয়ে খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়লাম।তখন একজন হেল্পিংহ্যান্ড রাখলাম সে সবকিছু করে দিতো আমি শুধু রান্না করতাম।আমার স্বামী আমার পিছনে প্রচুর টাকাপয়সা খরচ করেছে এবং আমাকে সুস্থ করার সবরকম চেষ্টা করেছে।কিন্তু ঈশ্বর হয়তো আমার উপরে বিরূপ ছিলো তাই আর সুস্থ হয়ে উঠা হলো না।সেই ২০১২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ওষুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন কাটাচ্ছি।

কিছুদিন আগে আমার স্বামীকে নিয়ে খুবই দুঃশ্চিতার মধ্যে ছিলাম কখন কি হয়!মনে মনে ভেবেছিলাম হয়তো স্বামীকে আর জীবিত অবস্থায় ফেরত পাবো না। আর এই দুঃশ্চিন্তা যে কি রকম ভয়ংকর তা শুধু যার সাথে ঘটে সেই বুঝতে পারবে।২২ দিন একটানা ঘুমাতে পারিনি এর যে কি যন্ত্রণা তা হয়তো এখন বলে বোঝাতে পারবো না।হতাশ হয়েছি তখন যখন মনে হতো স্বামীকে জীবিত দেখতে পাবো না।যাইহোক ঈশ্বরের আশীর্বাদে সে ভালো আছে সুস্থ আছে কিন্তু সেই হতাশা এখনও মন থেকে দূর করতে পারিনি এখনো ভাবলে বুকের ভেতর কেঁপে উঠে মনে হয় হার্ট অ্যাটাক করে ফেলবো যেকোনো সময়।

তারপর হতাশ হই যখন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার ডান হাতের সবগুলো আঙুল ব্যথায় বাঁকা হয়ে গেছে কাজ করার মতো কোনো ক্ষমতা নাই।তখনই হতাশ হয়ে যাই,এটা ভেবে আমি যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকি তাহলে আমার সন্তানের কি হবে,ওদের ভবিষ্যত কি?আমার না হয় একরকম ভাবে জীবন কেটে যাবে কিন্তু আমি ছাড়া তো ওদের দেখাশোনা করার কেউ নেই।এগুলো ভেবে খুবই হতাশাগ্রস্ত থাকি আর তখন কাজকর্ম মানুষজন কিছুই ভালো লাগে না।আমি সবকিছুই পারফেক্ট ভাবে করতে চাই কিন্তু পারি না। এটা আমার অলসতা নয় এটা আমার অক্ষমতা।কারণ আমার ইচ্ছে আছে কিন্তু আমি করতে পারছি না আর এটা খুবই কষ্টদায়ক লাগে আমার কাছে যা হয়তো অনেকেই অনুভব করতে পারবে না।তার কারণ হলো যার যার ব্যথা সেই শুধু বোঝে তার কি যন্ত্রণা।

IMG_20241119_214652.jpg

IMG_20241119_214741.jpg

লিখতে লিখতে অনেক কিছুই লিখে ফেললাম, মানুষের জীবনের সব গল্প লিখে শেষ করা যাবে না কখনোই।তার কারণ জীবন টা একদিনের নয় এখানে সুখদুঃখ হাসি কান্না জড়িত অনেক গল্প থাকে যা সবসময়ই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।আমিও চাই একটি হতাশা মুক্ত নিশ্চিত জীবন হোক আমার যেখানে কোনো দুঃশ্চিন্তা থাকবে না সবসময়ই সুস্থ সুন্দর একটি মন নিয়ে আমি আনন্দের সহিত বাঁচতে পারবো।জানি এটা কখনোই সম্ভব নয় তারপরও এরকম জীবন সবারই কাম্য...।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং আমার জন্য আশীর্বাদ দোয়া করবেন।

IMG_20230307_020842.png

6nSeSEzKEwjJN68tMqgZXvpyk1cf2ihqXgmWESDgXSh21PxWHDWW9CETD5B5Jw9Q6ERAnD25KhyHKAX53jBLJKQRtPJf1WFG3aJd6PXbp2...SwCeUWfeYFqXEU6k9E1QBR3LLWpTGQPTugeRKSuzSqXPiupWgvjugsTQfwLmEzMp6y8qhddmwictcszT5MtchDJq2GfNthESS97LtxV2WaG7p797tQfCnHDy4R.gif

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

Break3.jpg
Banner User.png
Break3.jpg

আমি অতসী চাকী (বৃষ্টি) । নতুন নতুন রেসিপি বানিয়ে সবাইকে খাওয়াতে আমার ভাল লাগে। আর ভাল লাগে নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ করতে। আমি "ভাল কাজের, ভাল ফল কথাটাতে" মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এবং মেনে চলার চেষ্টা করি।

Break3.jpg

IMG_20241118_212315.png

Comments

Sort byBest