বিন্তিকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর কথাটা বিন্তি মেনে নিতে পারেনি।হাসপাতালে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো কলরব আর রিমঝিমকে দেখতে চেয়েছিলো। রিমঝিম হলো কলরব আর বিন্তির চার বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে, খুব আদরের ছিল ও। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর আর মিষ্টি একটা মুখ ছিলো রিমঝিম। শেষবারের মতো দেখা করার কথাটা কলরব ফেলতে পারেনি বলেই হয়তো আজকে কলরবের কথা মনে করে সবাই চোখের পানি ফেলে। সেদিন বিন্তি খাবারে বিষ মিশিয়ে নিজেকে শেষ করেছিল, সেই সাথে কলরব আর রিমঝিমকেও নিয়ে গিয়েছিল একবারের মত। চার বছরের একটা মিষ্টি বাচ্চা, আমাকে খালামনি বলে যে ডাকতো দেখা হলেই....ওর মুখে শেষবারের মত আর খালামনি ডাকটা শোনার ভাগ্য হয়নি।
কাফনের কাপড় মোড়ানো দুইটা নিষ্পাপ মুখ সেদিন আমাকে একবারের জন্য চুপ বানিয়ে দিয়েছিল। আমি আর সেই মুখ দুটো ভুলতে পারিনি। ওরা রোজ আমার স্বপ্নে আসে, আমার কল্পনাতে ভেসে বেড়ায় ওদের কথা। প্রতিটা রাত খুব কষ্টে কাটে আমার। এত কাছ থেকে প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রণাটা কোনোকিছুর সাথে মেলানো সম্ভব না হয়তো। আমরা কেউই কথা বলতাম না কলরবের সাথে....ওর বিয়ের পর থেকে। কারণ বিন্তি সেটা সহ্য করতে পারতো না। খুব রেগে যেত, ছোটো মেয়েটার উপর হাত তুলতো, কলরবকে যা মুখে আসতো তাই বলতো। আমরা সবাই তাই কলরবের কাছ থেকে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলাম। ও যাতে ভালো থাকে সেইজন্য নিজেদের কষ্ট দিতাম।
মাত্র দু তিনবার রিমঝিমকে দেখতে পেরেছিলাম, তাও খুব কষ্টে কলরব সময় করে লুকিয়ে নিয়ে এসেছিল ওকে আমাদের সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার জন্য।প্রিয় মানুষটাকে এইভাবে হারিয়ে ফেলার পর আর কোনোদিন কাউকে প্রিয় বানানোর ইচ্ছে হয়নি, কারও প্রিয় মানুষ হয়ে ওঠারও ইচ্ছে হয়নি। নিজের মত থেকে গেলাম...এখনো তাই আছি, বেশ ভালই আছি। শুধু ওই রাতের বেলায় আর আমার অবসর সময় গুলোতে খুব পোড়ায় ওই নিশ্চুপ মুখ দুটো। সাদা কাপড় জড়ানো, চোখ বন্ধ, চুপচাপ শুয়ে থাকা শরীর দুটো আমার চোখে এখনও ভাসে। আমি মাথা থেকে সরিয়ে দিতে পারিনা। বাকিটা জীবন এই কষ্ট পোষা মানুষ হয়েই কাটিয়ে দিবো। আর কাউকে প্রিয় বানিয়ে হারিয়ে ফেলার কিংবা কাউকে কথা দিয়ে সেই কথা রাখার জন্য নিজেকে আর এইভাবে নিঃস্ব করে ফেলার ইচ্ছে নেই আমার..... !