ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষে পরিবারকে মানিয়ে নিয়ে ওরা বিয়ে করে নিয়েছিল। একজন নাকি আরেকজনকে হারাতে চায়নি তাই তাড়াতাড়ি কবুল বলে নিয়েছিল। আমি আর ঐদিকে পাত্তা দেইনি। নিজের মতো একটু একটু করে গুছিয়ে নিচ্ছিলাম। খুব কষ্ট হতো, ভেতরটা ভার হয়ে থাকতো। কথা বলা, হাসা, প্রিয় কাজগুলো করা সব একরকম ভুলে গিয়েছিলাম। রোজ রাতে বিছানার ওপর এপাশ ওপাশ করে রাত কেটে যেত। আমার ভেতরকার অনুভূতিগুলো আমাকে ঘুমুতে দিতো না। জানালার পাশে বসে নিজেকে সবকিছু থেকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করতাম রোজ কিন্তু সেটা আজও সফল হয়নি।
খুব ভয়ানক একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে নিজেকে টেনে হিচরে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। তারপর অনেকদিন কেটে গিয়েছিল প্রায়। কষ্টগুলো ভুলে যেতে বই পড়ার অভ্যাস বানিয়েছিলাম, দুইটা পোষা বিড়াল ছিল, ছোটো একটা বারান্দা বাগান ছিল। আমার সময় খুব ভালোই কেটে যাচ্ছিল। অফলাইন জগতের মধ্যে নিজেকে নিয়ে আসা, সবকিছু থেকে দূরে, যখন তখন ঘুরতে বেরিয়ে পড়া। যতটা কষ্ট থেকে দূরে থাকা যায় আমি চেষ্টা করেছিলাম। আসলে ফায়দা তেমন হয়নি হয়তো। নাহলে আজকে এই সকাল বেলায় চায়ের মগ হাতে বারান্দায় বসে আগের কথাগুলো মনে করতাম না আমি।
কষ্ট চেপে রাখতে রাখতে একরকম বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। চোখের দৃষ্টি আর ঝাপসা হয়ে আসতো না জলে। কেউ হয়তো আমার জায়গায় থাকলে সব ছেড়ে ছুড়ে দেশান্তরী হতো কিন্তু আমি নিস্তব্ধ পুতুল হয়ে এখনো থেকে গেছি এইখানে।আমি কষ্ট পুষতে ভালোবাসি বলেই হয়তো দৌড়ে পালাতে পারিনি। চোখের সামনে নিজের মানুষটাকে আরেকজনের করে দিয়েছিলাম, আর এখন যেটা পাচ্ছি সেটা তো কষ্টই না বলা চলে। আমি তো কষ্ট পোষা মানুষ...আমি জানি পুড়ে যাওয়া মনের যন্ত্রণা খুব সমীচীন না হলেও সহ্য করার মতন। তাই এখনও সহ্য করে যাচ্ছি। আমাকে আগলে রাখার জন্য এখন আর কোনো হাত নেই। আমার মন খারাপ উধাও করে দেয়ার মত এখন আর কোনো মানুষ নেই।
আমি কিন্তু দিব্যি বেচেঁ আছি, বেচেঁ থাকার তাগিদ তাই বেচেঁ আছি অবশ্য। আমি আমার জীবনে কোনোদিন এত ছোটো কাফনের কাপড় দেখিনি। সেদিন দেখেছিলাম একদম কাছ থেকে। বিন্তির মানসিক অসুখটা খুব খারাপ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। ও কলরবের পাশে কাউকে সহ্য করতে পারতো না। কলরব লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে যেত, লুকিয়ে পয়সা পাঠাতো। এত ভালো একটা মানুষ বেচেঁ থাকতেই হয়তো ভেতরে ভেতরে মরে গিয়েছিল। আমি প্রায় এক বছর পর ওর কাছ থেকে এইসব শুনেছিলাম। আমার কিছু বলার মত ছিল না সেদিন। তারপর একদিন.....সব শেষ।