সাতকাহন | অতীত থেকে দূরে থেকে [ রম্যকথন ]

asifanwar1 -

🗓️📌 তারিখ :২৭.০৭.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ।

হ্যালো প্রিয় কমিউনিটির বন্ধুগণ,

সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা বরাবরের মতো ভালোই আছেন আর পরম করুণাময়ের কৃপায় সুস্থ সাবলীল একটি প্রাণময় জীবনযাপন করছেন৷ সবার সুস্থতা ও শান্তির বার্তা জ্ঞাপন করে আজকের ব্লগ শুরু করছি।

সময় একটি নদীর স্রোতের মতো বয়ে চলে, এ পথচলার কোন শেষ নেই। জীবন পথের মাঝে দেখা যায় কখন যে সকাল গড়িয়ে সূর্য মাথার ওপর এসে পড়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এই নিত্যনৈমিত্তিক জীবন ঘিরে যে কত ঘটনা, কত শত পটপরিবর্তন ঘটে চলে তার সবটুকু আমরা খেয়াল করি না, মনে রাখি না যা দীর্ঘদিন ধরে নিজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এক ধরণের মানুষ থাকে যারা শুধু যতটুকু প্রয়োজন জীবিকা নির্বাহের ঠিক ততটুকুই করে, তার বাইরে আর অন্য তেমন কিছুর বেশি একটা স্থান নেই। এমনকি যদি মন চায়, খুব করে ঘুরে বেড়িয়ে আসতে যে জায়গায় অনেকদিন যাওয়া হয়ে ওঠে না তারপরেও জাগতিক ধাবমান সময় আর বাস্তবতা থেকে রেহাই দেওয়া হয়ে ওঠে না। ব্যস্ততার সবটা চাদর শুধুই নিজ দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য।


Src

বিগত কয়েক বছর ধরে লেখালেখির মধ্যে এক ধরনের নির্লিপ্ত সুখ খুঁজে পেয়েছিলাম, যেমন করে সিগারেটের একটা টান যারা ধূমপায়ী তাদের তাড়া করে বেড়ায়। এখনকার আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে খাতাপত্র আর ডায়েরিটার পৃষ্টা ধূলো ময়লা জমে টেবিল কিংবা কোন বইয়ের তাকের এক কোণায় পড়ে থাকলেও তা ছুঁয়ে দেখার তেমন সময় পাওয়া যায় না।

খানিকটা আলসেমি, বিপরীতে কিছুটা অপ্রয়োজনে। একটি টিস্যুর খালি প্যাকেটটাও দিনশেষে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার ভাগ্য বরণ করে নেয়, সেখানে প্রয়োজন তার অনুপস্থিতিতে সবটাই অস্তিত্ব বিলোপ করে পেয়ে বসে। বাস্তবতা।

এই তো সপ্তাহখানেক আগে চোখের দেখার মধ্যে যেটুকু অদ্ভুত অনুভূতি ধরে বসেছিল তার সাথে যোগ হলো আরেকটি। ইন্টারনেট বিহীন অবস্থা। এমন অবস্থার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না, বোধহয় আমি কেন, বাংলাদেশের কেউই জানতো না চল যেতে হবে সেই দশকের বেশি সময়ের আগের দিনে। স্বয়ং এ পরিস্থিতির সিদ্ধান্ত গ্রাহকও বিষয়টির অবসম্ভাবি পরিণতি সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল।

যা হোক, আমার একটি শখ ছিল শৈশবের পরের থেকে পুরনো কিছু জিনিসপত্র সংরক্ষণ করা, ধরে রাখা যাতে করে অনেকদিন পর নজরে এলে কিছুটা স্মৃতিকাতরতা আর রোমাঞ্চ আঁকড়ে ধরে। কি কি জিনিস তুলে রেখেছি খানিকটা যত্ন করে তার ব্যাপারে পুরো ফিরিস্তি আজ নাই বা দিলাম, তবে প্রাসঙ্গিকভাবে যা বলতে চাই তা হলো - একটি ২জি মোবাইল ফোন, যে স্মার্টফোন ব্যবহার করছি তার দাদামশাই কিংবা পিতৃব্য, হা হা ।

সবকিছুরই বিবর্তন ঘটে চলে, মোবাইলের ক্ষেত্রে হবে না, তা কি করে হয় ?


Src

যখন ইন্টারনেট অফ হয়ে গেল তারপর কেবল ইমার্জেন্সি কল, ভয়েস কল আর হালকা কিছু কাস্টমার সার্ভিস এভিইলেবল ছিল। স্বাভাবিকভাবেই স্মার্টফোনের অ্যাপসগুলোর প্রায় সিংহভাগই যেমন ডিসকর্ড, মেটা, সোশ্যাল মিডিয়া, মেসেঞ্জার যোগাযোগ ইত্যাদি সবকিছুই অচল ছিল, সম্পূর্ণ অনধিকৃত। গোটা চার পাঁচ দিন।

এর মধ্যে প্রথমেই ভাবলাম, বাবা স্মার্টফোন তোমায় এবার কয়েকদিনের জন্য ছুটিতে পাঠাই, কি বলো 😀? তারপর চট করে মনে হলো যে মোবাইলের একটি ছোট চেয়ার ছিল বসিয়ে রাখার জন্য, সেটার খোঁজ নেওয়া যাক। নোকিয়া ১২০০ মডেলের মোবাইল চালানোর জন্য একটি সিম, একটি ব্যাটারি, অন্য কিছু নেই।

ধূলো ময়লা প্রথম দিককার এ মোবাইল ছিল কিছুটা দুষ্প্রাপ্য, বাজারে তেমন কিনতে পাওয়া যেত না। ২০০৭-৮ এর দিকে তার ব্যবহার খুব বেশি রকমের বেড়ে যায় আর তাতেই জনপ্রিয়তা চড়চড় করে ওপরে উঠে যায়। আমার সংগ্রহে থাকা মোবাইলটি রেখে দেই, বছর দুয়েক পর সম্প্রতি এটির ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

কিন্তু ব্যবহার বা প্রয়োজন ঠিকই ফুরিয়ে যায় কিন্তু স্মৃতি কি খুব সহজেই হারিয়ে যায় ? শুরুতেই বলেছিলাম কিভাবে মানুষ প্রয়োজনটাকেই আঁকড়ে ধরে রাখে, তার বাইরে আর যা কিছু গৌণ।

একটা সময় প্রয়োজন মানুষকে নিয়ে যায় নতুন কোন গন্তব্যে, তা স্বাভাবিক কিংবা সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে থাকে ধীরে ধীরে। এরই মাঝে সার্থকতা আর অল্প অল্প করে বেড়ে ওঠা। নেটওয়ার্ক - ইন্টারনেটের বাইরে গিয়ে অনুভব করলাম, জীবনের আরো কত কিছু বাকি রয়ে যায়, দৃষ্টিসীমার বাইরে। তার উপলব্ধিই সমিধ পথে গত্যন্তর করে।


Src

আঁধার ক্রমশ ঘন হচ্ছে, আকাশের তারা ঝলমলে রূপ হালকা হাওয়ায় গা জুড়িয়ে নিচ্ছে। তারপর মনে হলো - শৈশবের সে দিনগুলোই তেমন রূপালি পাতায় মোড়ানো, সবসময় তা বুঝতে পারা যায় না। তবুও, তা মন কেড়ে নেয়।

ধন্যবাদ ।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা