আমরা যারা ৯০ দশকে জম্নগ্রহন করেছিলাম আমাদের ৯০ দশকের শৈশব ছিল একদমই আলাদা। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া ছাড়াই প্রাকৃতিক পরিবেশে শৈশব কেটেছিলো নির্মল আনন্দে। তখনকার আমাদের সময় কাটানোর প্রধান মাধ্যম ছিল বন্ধুদের সাথে খেলার মাঠ বা বৃস্টির দিনে ঘরের কোণে বসে কেরাম বোর্ড খেলা, স্কুলের নতুন নতুন বইয়ের নতুন নতুন কাহিনি, আর পারিবারিক গল্পগুজব ছিলো বোনাস হিসেবে। ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, ভিডিও গেমস তখন কল্পনাতীত বিষয় ছিলো। তখন ছিলো ১ টাকার মোস্তফা গেমের মজা। তবে এই যুগ ছিলো অনন্য এবং স্মৃতিবিজড়িত।
৯০ দশকের আমাদের সময় কাটানোর জন্য মাঠের উপর অনেকটাই নির্ভর করতাম। ক্রিকেট, ফুটবল, গুল্লি-ডাংকা, বৌছি, ডাংগুলি, কানামাছি, আর লুকোচুরি ছিলো সে সমের আমাদের জনপ্রিয় খেলা। প্রতিদিন বিকেলে সবাই মাঠে ছুটে যেত, সে সময় একটি রুটিন ছিলো। বিকেলে খেলতে যাওয়া ও সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে মা-বাবার বকানি খাওয়াটা যেন রোজকার ঘটনা ছিল, ঘটনা গুলো ভাবলেই এখন হাসি পায়, হাহাহা। আগে বিনোদনের সেরা মাধ্যম হিসেবে ছিলো টেলিভিশন।
তখনকার আমাদের প্রিয় বিনোদন ছিল টিভি কার্টুন। ছুটির দিনে বাংলাদেশ টেলিভিশন এ জনপ্রিয় কার্টুনগুলো দেখার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষায় থাকতাম। হেইমান জাহাঙ্গীর আলমের কার্টুন শো, আলিফ লায়লা, টম অ্যান্ড জেরি এবং মোগলি ছিল বেশ জনপ্রিয়, এই সব শো দেখার জন্য পুরো এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে থাকতাম। টিভি দেখার সেই মজাই ছিল আলাদা, কেননা তখন হাতে একমাত্র টিভি চ্যানেল ছিলো বিটিভি সেটাও আবার সাদা কালো টিভি। সেই আনন্দটাই ছিলো অন্যরকম।
৯০ দশকের আমাদের শৈশবের গ্রামীণ মেলা থেকে খেলনা কেনা ছিলো অন্যতম এক বাহানা, আমি তো টিনের পিস্তনমল কিনতাম আর ঠাস ঠাস করে গুলি করতাম, হাহাহাহ। এছারাও বেলুন, কাঁচের গয়না, মাটির থালাবাসন, নানা রকম মজার খাবার কিনে আনন্দিত হতাম। সেই সময়কার মেলাগুলোয় কাঠের খেলনা, বাঁশি, হারিকেন, কিংবা হাতে বানানো মাটির খেলনা ছিল জনপ্রিয় যা প্রায় সবাই কিনতো।
তখন প্লাস্টিকের খেলনার চাইতে পিতলের গাড়ি, কাঠের ব্যাট, মার্বেল, সাপলুডু, লুডো এবং বাঁশের কাগজী ছিল আমাদের খেলার প্রধান সামগ্রী। সামান্য জিনিস দিয়েই আমরা অনেক মজা করতাম। আগে আমরা কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ছাড়াই ছোট ছোট খেলনাগুলোর সাথে নিজেদের আলাদা জগত তৈরি করতে নিতাম। সে সব বিষয় গুলো ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।
তখন ফ্যামিলি টাইম ছিল আমাদের জীবনের একটা বড় অংশ। সন্ধ্যায় সময় খেলা ধুলা করে সবাই একসাথে বসে গল্প করতাম এছারাও পড়াশুনা তো রয়েছেই, আবার রাতে দাদা-দাদী বা নানা-নানীর কাছ থেকে শোনা ভূত প্রেতের গল্প শোনা ছিল শৈশবের অন্যতম আনন্দের উৎস।আমাদের স্কুলের সময়ও ছিল খুবই স্মৃতিবহুল, কত ধরনের যে মজা করতাম অনেক কিছুই এখন ভুলতে বসেছি। তখন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সবাই মিলে একে অপরের সাথে বই বিনিময় করতাম। ছোটদের জন্য বেশ কয়েকটা বইও ছিলো যেমন: টিনটিন, তিন গোয়েন্দা, ফেলুদা, আর হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো ছিল আমাদের প্রধান আকর্ষণ।
তখন আমাদের মোবাইল ফোন না থাকায় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল চিঠি। বন্ধুরা একে অপরের সাথে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করতাম। গান শোনার জন্য ক্যাসেট প্লেয়ার ছিলো। গান শোনা এবং প্রিয় গানগুলো রেকর্ড করা ছিল আমার সে সময়ের অন্যতম শখ।
৯০ দশকের আমাদের শৈশব ছিল অনেক সহজ, সরল, আর আনন্দময়। বর্তমানের ডিজিটাল জীবনযাপনের তুলনায় এই সময়টা অনেক বেশি হৃদয়গ্রাহী ছিল। সবার মাঝেই ছিলো আন্তরিকতা ও ভালোবাসা। তখন আমরা কৃত্রিম আনন্দের চাইতে প্রকৃতির সাথে মিশে মজা করতে জানতাম, যা আমাদের মনে আজও সেই সময়টাকে স্মৃতিময় করে রেখেছে। আজকের মত এখানেই শেষ করছি, আপনারা সবাই ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।
বিষয়: ৯০ দশকের শৈশব
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ......